মহানবী সাঃ এর জীবনী

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইসলামের সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নবী। তাঁর জীবন ও আদর্শ মুসলিম উম্মাহর জন্য পথপ্রদর্শক। নিচে সংক্ষেপে তাঁর জীবনী তুলে ধরা হলো: জন্ম ও শৈশব: জন্ম: মহানবী (সাঃ) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে (ইসলামী বর্ষপঞ্জি অনুসারে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ) মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবদুল্লাহ এবং মাতা আমিনা। বাল্যকাল: নবী (সাঃ) তাঁর পিতার মৃত্যু হয় তাঁর জন্মের আগেই, এবং ছয় বছর বয়সে মাকে হারান। এরপর দাদা আবদুল মুত্তালিব এবং পরে চাচা আবু তালিব তাঁর অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন। যুবক বয়সে জীবন: নবী (সাঃ) সততা ও ন্যায়পরায়ণতার জন্য "আল-আমিন" (বিশ্বস্ত) এবং "আস-সাদিক" (সত্যবাদী) নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ব্যবসা ও সত্যবাদিতার জন্য প্রশংসিত হন। ২৫ বছর বয়সে ব্যবসায়ী নারী খাদিজা (রাঃ)-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। নবুওয়ত লাভ: ৬১০ খ্রিস্টাব্দে, ৪০ বছর বয়সে মহানবী (সাঃ) হেরা গুহায় ইবাদতরত অবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রথম ওহি (প্রকাশিত বাণী) লাভ করেন। এ ওহি নিয়ে জিবরাঈল (আঃ) তাঁর কাছে আসেন। এটি ছিল কুরআনের প্রথম আয়াত (সূরা আলাক: ১-৫)। ইসলামের প্রচার: প্রথমে তিনি গোপনে এবং পরে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত শুরু করেন। তাঁর দাওয়াত ছিল আল্লাহর একত্ববাদ, মানুষে মানুষে সাম্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে। কুরাইশরা প্রথমে তাঁকে বিরোধিতা করে এবং তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের নানা অত্যাচার করে। মদিনায় হিজরত: মক্কায় অত্যাচার বৃদ্ধি পেলে নবী (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবিরা মদিনায় হিজরত করেন (৬২২ খ্রিস্টাব্দে)। এটি ইসলামী বর্ষপঞ্জির সূচনা। মদিনায় তিনি একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে মুসলিম, ইহুদি, এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মাঝে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত হয়। যুদ্ধ ও শান্তি: মহানবী (সাঃ) মক্কার কাফেরদের সাথে বিভিন্ন যুদ্ধ করেছেন, যেমন বদর, ওহুদ, এবং খন্দক। তবে প্রতিবার তিনি ক্ষমা ও শান্তির শিক্ষা দিয়েছেন। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মক্কা বিজয় করেন। বিজয়ের পর তিনি মক্কাবাসীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। ইন্তেকাল: ৬৩ বছর বয়সে, ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে (ইসলামী বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১১ হিজরি), মহানবী (সাঃ) মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তাঁকে মসজিদে নববীতে দাফন করা হয়। আদর্শ ও শিক্ষা: মহানবী (সাঃ)-এর জীবন ছিল কুরআনের প্রতিফলন। তাঁর চরিত্র, দয়া, ন্যায়পরায়ণতা, ধৈর্য এবং মানবতাবোধ মানবজাতির জন্য আদর্শ। তিনি বলেন, "তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার চরিত্রে উত্তম।" (সহীহ বুখারি) উপসংহার: মহানবী (সাঃ)-এর জীবন শুধু মুসলিমদের জন্য নয়, বরং সারা মানবজাতির জন্য একটি চিরন্তন দৃষ্টান্ত। তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ সর্বদা মানবতার উন্নতি এবং শান্তির পথে অনুপ্রেরণা জোগায়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url